বীমাবিদ সরওয়ারদি চৌধুরী ইন্তেকাল করেছেন
প্রকাশিত : ১২:৫৪, ২৯ মে ২০২৩
দীর্ঘদিন নানা জটিল রোগে ভোগে ২২মে রাত ৮টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা গেছেন ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক এমডি, স্পন্সর ডিরেক্টর ও চাটগাঁর বাণী পত্রিকার সাবেক উপদেষ্টা এ কে এম সরওয়ারদি চৌধুরী (৭৩)।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী রাশেদা বেগম, মেয়ে তানিয়া ইসলাম, সুমাইয়া নুসরাত, ছেলে এ কে এম শরফুদ্দিন চৌধুরী সজিব ও এ কে এম জিয়াউদ্দিন চৌধুরীসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
গত ২৩ মে বাদ মাগরিব উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের বাসভবন সংলগ্ন মসজিদে তার প্রথম নামাজে জানাজা এবং শেষ জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। ২৪ মে বাদ আছর সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটের গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
সরওয়ারদি চৌধুরী ১৯৫০ সালের ১৬ মার্চ সীতাকুণ্ড উপজেলার উত্তর সলিমপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জ্ন্মগ্রহণ করেন।
শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি স্বাধীনতোত্তর বাংলাদেশে তৎকালীন ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে জুনিয়র অফিসার হিসেবে যোগদান করেন।
পরবর্তীকালে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনে ডেপুটি ম্যানেজার থাকাকালীন বাংলাদেশ বীমা একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত এডভান্স ইন্স্যুরেন্স কোর্স সম্পন্ন করেন।
১৯৮৮ সালের ১ জানুয়ারি তিনি ফেডারেল ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে জেনারেল ম্যানেজার পদে যোগদান করেন।
এ কোম্পানির সার্বিক দায়িত্ব অত্যন্ত সততা ও দক্ষতার সাথে পালনের ফলে ১৯৯১ সালে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, ১৯৯৪ সালে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ১৯৯৬ সাল থেকে তিনি এ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
সরওয়ারদি চৌধুরী মানবীয় গুণাবলী ও আকর্ষণীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারি ছিলেন। দানবীর সরওয়ারদি চৌধুরী ছিলেন একজন সাদা মনের আলোকিত মানুষ।
সরওয়ারদি চৌধুরী রাজনীতির মাঠ থেকে উঠে আসা একজন সফল বীমাবিদ। রাজনীতির চেয়ে বীমাশিল্পে তিনি সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিজের জায়গা করে নিতে পেরেছেন।
স্বাধীনবাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম এম আর সিদ্দিকী যে চেয়ারে বসে একসময় দায়িত্ব পালন করেছিলেন, সেই একই চেয়ারে আসীন হয়ে সরওয়ারদি চৌধুরী ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
এম আর সিদ্দিকীর সাথে সরওয়ারদি চৌধুরীর সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত গভীর। এম আর সিদ্দিকী শুধু তার রাজনৈতিক গুরু ছিলেন না, তিনি ছিলেন তার কর্মক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়ানোর সকল অনুপ্রেরণার উৎস।
যে ইস্টার্ন কোম্পানিতে সরওয়ারদি চৌধুরীর কর্মজীবন শুরু হয়, সেই কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন তারই বড়ভাই একাত্তরের রণাঙ্গণে শহিদ এ কে শামসুদ্দিন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও স্বাধীনতা সংগ্রামে রয়েছে তার গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। সীতাকুণ্ড নির্বাচনী এলাকা থেকে এমপি পদে নির্বাচন করতে কয়েকবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নও চেয়েছিলেন।
সরওয়ারদি চৌধুরী ব্যক্তিগতভাবে সীতাকুণ্ড ছাড়াও দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পৃষ্টপোষকতা করেছেন।
তিনি নেচার কনজারভেশন কমিটির সহ-সভাপতি, কবি সরোজিনি নাইডু স্মৃতি পরিষদের কোষাধ্যক্ষ, উত্তরা ফোরাম-ঢাকা’র সভাপতি,সীতাকুণ্ড মাতৃভূমি সামাজিক সংগঠনের প্রধান পৃষ্টপোষক,চট্টগ্রাম সরকারি বাণিজ্য কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন-ঢাকার আহবায়ক, সীতাকুণ্ড সমিতি- ঢাকার সভাপতি, সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম এর পৃষ্টপোষক সদস্যসহ বহু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সমাজসেবা ও বীমাশিল্পে বিশেষ অবদানের জন্যে চাটগাঁর বাণী পত্রিকা তাকে ২০১৮ সালে সম্মাননা স্মারকে ভূষিত করে।